রাজধানীর কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন জায়গায় অবৈধ ভাবে গড়ে উঠছে সিসা তৈরির কারখানা। টিন ও বিভিন্ন লোহার বর্জ্যসহ পরিত্যক্ত ব্যাটারি সংগ্রহ করে সেগুলো পুড়িয়ে সিসা বের করা হচ্ছে অনেকটা অরক্ষিতভাবে। কারখানার কালো ধোঁয়ায় দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। এতে শ্রমিকদের যেমন শারীরিক ক্ষতি হচ্ছে, তেমনি ক্ষতির মুখে পড়ছেন কারখানার আশপাশের মানুষ।
উপজেলার খোলামুড়া, শুভাঢ্যা পশ্চিম পাড়া রতনের খামার এলাকাসহ বিল কাঠুরিয়া ও চিতাখোলা থেকে আব্দুল্লাহপুর যেতে চোখে পড়বে একাধিক অবৈধভাবে গড়ে ওঠা সিসা তৈরি কারখানা। দিনের পাশাপাশি রাতেও সিসা গলাতে ব্যস্ত থাকেন এসব কারখানার শ্রমিকরা। টিন ও বিভিন্ন লোহার বর্জ্যসহ পরিত্যক্ত ব্যাটারি সংগ্রহ করে সেগুলো পুড়িয়ে তৈরি করা হয় সিলভার ও সিসা। এক্ষেত্রে শ্রমিকদের নেই কোনো সতর্কতামূলক প্রস্তুতিও।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বিষাক্ত সিসার গ্যাসের দুর্গন্ধ ও ধোঁয়ায় স্বাভাবিক শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। পাশাপাশি নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন তারা। কমে যাচ্ছে মাটির উর্বরতা। নষ্ট হচ্ছে ফসলি জমি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কারখানার ভেতরে শ্রমিকেরা কাজ করছেন। কেউ পুরোনো ব্যাটারির ওপরের অংশ খুলে প্লেট (ব্যাটারির ভেতর থাকা পাত) বের করছেন। কেউ ব্যাটারি থেকে অ্যাসিড বের করে সংরক্ষণ করছেন।
শ্রমিক আমির হোসেন জানান, চুল্লির মধ্যে কাঠ ও কয়লায় অ্যাসিড মিশ্রিত ব্যাটারির বর্জ্য বা প্লেট সাজানো হয়। এরপর আগুন ধরিয়ে দিলে তা গলতে থাকে। একই সঙ্গে বৈদ্যুতিক পাখা থেকে বাতাস দেওয়া হয়। এভাবে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় সিসা তৈরি হয়। তবে এই কাজ করতে তার কোনো সমস্যা হয় না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শুভাঢ্যা পশ্চিম পাড়া রতনের খামার এলাকার একজন বলেন, এই কারখানায় সারাদিন ও রাতে সিসা পোড়ানো হয়। হাঁচি-কাশি লেগেই থাকে, বিশেষ করে ছোট বাচ্চাদের। এলাকার প্রভাবশালীদের প্রভাব দেখিয়ে এই অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। রাস্তার সাথে ব্যাটারি কারখানা থাকায় সিসার দুর্গন্ধে রাস্তা দিয়ে চলাচল করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
স্থানীয় পরিচর্যা ডিজিটাল হাসপাতালের নবজাতক, শিশু ও কিশোর বিশেষজ্ঞ ডা. পলাশ বরণ চক্রবর্তী জানান, সিসার বিষাক্ত ধোঁয়ায় ও দুর্গন্ধে সবচেয়ে বেশী স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছেন বৃদ্ধ ও শিশুরা।
এই বিষয়ে কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মেহেদী হাসান জানান, মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করে সিসা কারখানাগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।